বিদ্যানগর উত্তর চব্বিশ পরগনার একটি আধা-শহর। না আছে সেখানে নাগরিক সমৃদ্ধি, না আছে গ্রাম্য লাবণ্য। তবে বহুদিন আগে বিদ্যানগর ছিল একটি সমৃদ্ধ জনপদ। প্রাচীন সমৃদ্ধির চিহ্ন বলতে এখনো সেখানে টিঁকে আছে তর্কালঙ্কার বাড়ি, আর একটি অতি বৃদ্ধ ধ্বংসস্তূপ। লোকে বলে রাজবাড়ি। রাজবাড়ির প্রাচীনতম অংশটি নির্মাণ করেছিলেন হরীশচন্দ্র, তিনি ছিলেন একজন ব্রহ্মক্ষত্রিয়। তর্কালঙ্কার বাড়িতে (লোকমুখে লঙ্কাবাড়ি) এখনো কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। তাঁরা মহানৈয়ায়িক জগদীশ তর্কালঙ্কারের বংশধর। রাজবাড়ি আর বসবাসের যোগ্য নেই। সেখানে শেয়াল আর ভামদের রাজত্ব। অবশ্য বিদ্যানগরের প্রবীণরা বলেন সেখানে আরো কেউ একজন থাকে। মাঝে মাঝে তাকে দে�... See more
বিদ্যানগর উত্তর চব্বিশ পরগনার একটি আধা-শহর। না আছে সেখানে নাগরিক সমৃদ্ধি, না আছে গ্রাম্য লাবণ্য। তবে বহুদিন আগে বিদ্যানগর ছিল একটি সমৃদ্ধ জনপদ। প্রাচীন সমৃদ্ধির চিহ্ন বলতে এখনো সেখানে টিঁকে আছে তর্কালঙ্কার বাড়ি, আর একটি অতি বৃদ্ধ ধ্বংসস্তূপ। লোকে বলে রাজবাড়ি। রাজবাড়ির প্রাচীনতম অংশটি নির্মাণ করেছিলেন হরীশচন্দ্র, তিনি ছিলেন একজন ব্রহ্মক্ষত্রিয়। তর্কালঙ্কার বাড়িতে (লোকমুখে লঙ্কাবাড়ি) এখনো কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। তাঁরা মহানৈয়ায়িক জগদীশ তর্কালঙ্কারের বংশধর। রাজবাড়ি আর বসবাসের যোগ্য নেই। সেখানে শেয়াল আর ভামদের রাজত্ব। অবশ্য বিদ্যানগরের প্রবীণরা বলেন সেখানে আরো কেউ একজন থাকে। মাঝে মাঝে তাকে দেখা যায়। বহুদিন আগে এই অঞ্চলটিকে রক্ষা করত বিদ্যাধরী নদী, অসংখ্য অজ্ঞাতকুলশীল নদী-নালা আর দুটি বিশাল অরণ্য। তখন বিদ্যানগরের রাজা ছিলেন প্রমথেশচন্দ্র। রাজবাড়ির ঠিক পাশে, বিমুক্তেশ্বর মন্দিরে তখন নিত্যপূজা চলত। বিমুক্তেশ্বরের গা ঘেঁষে বয়ে যেত পূর্ণা নদী। এখন অবশ্য তার প্রাচীন নাম হারিয়ে গেছে। তার নাম রাজবাড়ির খাল। সে তার উৎস আর গন্তব্য, দুই হারিয়ে ফেলেছে। সে কালে পূর্ণা ছিল বেগবতী। আজকের মতো তখনো পূর্ণা পার হওয়ার জন্য একটি বাঁশের সাঁকো ছিল বটে। তবে পার হওয়ার সাহস ছিল খুব কম লোকের। ওপারে একটা পায়ে-চলা পথ ছিল। রাধারমণ নামের এক স্থিরযৌবন তমাল গাছ পার হলেই সে প্রায় অদৃশ্য হয়ে পড়ত। কষ্টে-সৃষ্টে আরো কিছুটা এগিয়ে গেলে দেখা দিতেন গোপীবল্লভ। তিনি একটি বৃদ্ধ বটবৃক্ষ। তাঁর অনতিদূরে দুটি শেওড়া গাছের মাঝে হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকত দামোদর নামে একটা পেটমোটা অচিন গাছ। এই পর্যন্তই দুঃসাহসীরা যেতে পারতেন। এর পর পথটি হারিয়ে যেত চুন্নীর জলার গভীরে। সেখানে শুরু হত পোদো, দয়া, আর আলিদের রাজত্ব। বিদ্যানগরে লঙ্কাবাড়ির চতুষ্পাঠীতে ন্যায়-ব্যাকরণাদি শাস্ত্র পড়াতেন শ্রী রামনারায়ণ তর্কালঙ্কার। আরো একটি পাঠশালা ছিল বটে বিদ্যানগরে, প্যাটসাহেবের পাঠশালা। সেটি চালাতেন জন প্যাটারসন নামে এক ইংরেজ ‘শিক্ষাবিদ্’। অবশ্য সেখানে পোড়ো তেমন ছিল না। আমাদের গল্পের মূল চরিত্র সেকালের বিদ্যানগরের কিছু মানুষ আর প্রাচীন অরণ্য।