সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায় কবি হিসেবে পরিচিত, কিন্তু গল্পকার হিসেবে তাঁর পরিচয় লুকিয়ে আছে তাঁর প্রত্যেকটি গল্পের শব্দে, কাহিনীবিন্যাসে এবং অভ্যন্তরীন মোচড়ে। সংহিতা একজন চিকিৎসক, কিন্তু তিনি জানেন কি ভাবে গল্প বুনতে হয়। একজন ডাক্তারবাবু যেমন নিপুণভাবে সেলাই করে দেন রোগীর ক্ষতস্থান, সেইভাবেই সংহিতা নিপুণ হাতে সেলাই করেছেন জীবনের নানা ওঠাপড়া, অজস্র সংবেদনশীল মুহূর্ত। প্রেম, ঘৃণা, ঈর্ষা, লালসা, বন্ধুত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা, সব মিলেমিশে যেন এক রামধনু তৈরি হয় সং হিতার গল্পে। সেই রামধনুর কোনও রঙ ফেলনা নয় কোনও রঙ ভালো নয়, খারাপও নয় কোনও রঙ। গল্পের পর গল্পে তিনি উন্মোচিত করেন কেবল মানবচরিত্রকে নয়, আজকের এই সামগ্রিক �... See more
সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায় কবি হিসেবে পরিচিত, কিন্তু গল্পকার হিসেবে তাঁর পরিচয় লুকিয়ে আছে তাঁর প্রত্যেকটি গল্পের শব্দে, কাহিনীবিন্যাসে এবং অভ্যন্তরীন মোচড়ে। সংহিতা একজন চিকিৎসক, কিন্তু তিনি জানেন কি ভাবে গল্প বুনতে হয়। একজন ডাক্তারবাবু যেমন নিপুণভাবে সেলাই করে দেন রোগীর ক্ষতস্থান, সেইভাবেই সংহিতা নিপুণ হাতে সেলাই করেছেন জীবনের নানা ওঠাপড়া, অজস্র সংবেদনশীল মুহূর্ত। প্রেম, ঘৃণা, ঈর্ষা, লালসা, বন্ধুত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা, সব মিলেমিশে যেন এক রামধনু তৈরি হয় সং হিতার গল্পে। সেই রামধনুর কোনও রঙ ফেলনা নয় কোনও রঙ ভালো নয়, খারাপও নয় কোনও রঙ। গল্পের পর গল্পে তিনি উন্মোচিত করেন কেবল মানবচরিত্রকে নয়, আজকের এই সামগ্রিক সমাজকে। স্বাভাবিকভাবেই বেশ কয়েকটি গল্পে চিকিৎসার প্রসঙ্গ এসেছে, বা এসেছে মহামারির সামনে কম্পমান সভ্যতার কথা। “ভয়” গল্পে পরাবাস্তবতার পৃথিবীতে আমাদের নিয়ে যান সংহিতা, যখন আমরা দেখি মৃতদেহ নিজেই প্লাস্টিকের ভেতর মোড়ানো অবস্থায় হেসে উঠছে! আবার মৃত্যু কী শুধু শরীরেরই হয়, মন বা আত্মার মৃত্যু হয় না? “অভিযোজন” গল্পে তপোব্রত চ্যাটার্জীর কি হয় তবে? মিথ্যা বদনামের শিকার তপোব্রত, মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে মানুষের আক্রমণের শিকার তপোব্রত নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে যখন আরো আরো টাকা রোজগারের দিকে ঝুঁকে পড়ে অনৈতিক উপায়ে, তখন তার সঙ্গে কি তফাত থাকে গিরগিটির? কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সংহিতার এক একটা গল্পে, সমাজজীবনের তথা মন জীবনের এক একটা দিক যেন ঝলসে উঠেছে। “যা বলা হয়নি” গল্পে আমরা সেই মেয়েটির কথা পাই, যে নিজের মা-কে ঘৃণা করে এসেছে বরাবর, কিন্তু তারপর নিজের মায়ের মধ্যেই সে খুঁজে পায় নিজেরই এক আয়না। “নিন্দে পানি” গল্পে, নদীর অন্তরে চলতে থাকা যে বিক্ষোভ, তার সঙ্গে মানুষের অন্তরে চলতে থাকা বিক্ষোভকে কি অনায়াস পারঙ্গমতায় মিলিয়ে দেন সংহিতা। “ভোটের হাওয়া”গল্পে আমরা কিভাবে সব সময় সংখ্যাগরিষ্ঠতার পক্ষে থাকতে চাই তারও একটা সুন্দর চিত্র তুলে ধরেছেন লেখক। এভাবেই গল্পের পর গল্পে সংহিতা মানসিক, মানবিক জীবনের স্তর আর সমাজ জীবন, বাস্তব আর পরাবাস্তবকে মিলিয়ে তৈরি করেছেন এক একটি অনন্য আখ্যান, যা পড়ার পর ও দীর্ঘক্ষণ রেশ থেকে যায় পাঠকের মনে। পাঠক আসুন, এই গল্পগুলি পড়ুন, এই নতুন গল্পকারকে আবিষ্কার করুন, আমার বিশ্বাস এই গল্পগুলি আপনাদের কেবল ভালো লাগবে তাই নয়, এগুলি আপনাদের ভাবাবে, উদ্বিগ্ন করবে, নতুন করে নিজেকে নিজে আবিষ্কার করার কথা বলবে।...বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়